তুমি কোন ভাঙনের পথে এলে।। রবীন্দ্রসঙ্গীত।।

Shyamasree Megh Bhattacharjee
Shyamasree Megh Bhattacharjee
504 بار بازدید - 2 ماه پیش - "মেঘ, এই ২৯ - ৩০
"মেঘ, এই ২৯ - ৩০ তারিখের মধ্যে কবে তোমার সময় হবে তাড়াতাড়ি বলো।" এই বছর 2024 এর জুন মাসের কথা।
সবে একটা বড় ট্যুর করে হাওড়া র বাড়ি ফিরেছি।  বিধ্বস্ত এবং বিপর্যস্ত। 21 জনের দল নিয়ে যাওয়া, সেই দল কে পাঠিয়ে দিয়ে আবার নিজেদের আরো 7 দিন, কাজেই ক্লান্তি তখন তুঙ্গে।
এইরকম একটা প্রশ্নে একটু থমকে গেলাম, ফোন টা করেছিলেন হেমন্ত দাদা। হেমন্ত চক্রবর্তী। থাকেন আমার আসল বাড়ির পাড়ায়,এবং আমার কর্তার বাল্যবন্ধু। সঙ্গীত প্রেমী এবং বোদ্ধা , অসম্ভব ভালো বেহালা বাদক।আমার সাথে যত যোগাযোগ বা কথাবার্তা এই গান বাজনা নিয়েই হয়। উনি অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছিলেন আমাকে দিয়ে গাওয়াবার,ওনার ইচ্ছে সামনে বসে গান শোনার এবং অপরকে শোনাবার যাঁরা রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে ভাবেন এবং ভালবাসেন। আমি যথারীতি সময় করতে পারিনি, কোনো বড় অনুষ্ঠানেই সময় দিতে পারিনি। সেজন্যে এবার মরিয়া হয়ে উনি আমাকে ধরেছেন , সবেমাত্র ঘুরে এসছি এখুনি নিশ্চয় কোথাও চলে যাব না।যাই হোক চিন্তা ভাবনা করে বলে ফেললাম 30 তারিখ করুন, দিনটা রবিবার। কিন্তু বিষয়টা যে শেষ পর্যন্ত এই মাত্রায় পৌঁছবে আমি তখনও ধারণা করতে পারিনি।
উনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন ওনার বাড়িতে হবে এই একক সংগীতানুষ্ঠান, আমি বললাম আমাদের বাড়িতেই হোক, খোলামেলা জায়গা ভালো হবে, উনিও রাজি হয়ে গেলেন এক কথায়।  এবং উনি শ্রোতা নির্বাচন করে গান শোনবার আমন্ত্রণ ও জানিয়ে দিলেন, যাঁদের অনেকেই আমার অপিরিচিত। বেশ উদ্বিগ্ন ছিলাম পুরো ব্যাপারটা নিয়ে। কারণ এভাবে একক সঙ্গীতানুষ্ঠান এর অভিজ্ঞতা এই প্রথম আমি অর্জন করতে চলেছি। সময় ছিল দেড়ঘণ্টা মত।গোটা 20 গান বেছে নিয়ে আমি প্রস্তুত।  সকাল থেকে সামান্য আয়োজন করা হলো, শ্রোতাদের বসার জায়গা,এবং শিল্পীদের জায়গা ,বেশ সুন্দর ভাবে হয়ে গেলো। দাদা সাউন্ড বলেছিলেন সেসব ও পরীক্ষা নিরীক্ষা সকালেই হয়ে গেলো।অবশেষে একে একে সকলে উপস্থিত হলেন,এবং আমি গাওয়া শুরু করলাম...আমি খুব উদ্যেশ্য প্রণোদিত ভাবেই লোকসমক্ষে খুব একটা গান গাই না, তার কারণ আজকাল অনেকের ই সময় হয়না ধৈর্য ধরে গান শোনার। সকলেই চঞ্চল, অথবা মোবাইল ফোন নিয়ে বেশ ব্যস্ত..যা গাইবার সময় চোখে পড়ে,এবং খুব ই আত্মসম্মানে  লাগে।কিন্তু এইদিন গান গাইতে বসে দেখলাম সকলে বিভোর হয়ে শুনছেন, pindrop silence... আমিও বিভোর হয়ে গাইলাম প্রায় 20 টা রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন স্বাদের গান, মুক্তচ্ছন্দ ও ছিল।
সত্যি কথা বলতে এরকম পরিবেশ, এরকম শ্রোতামন্ডলী পেয়ে আমি আপ্লুত। আমার সংগীতজীবন খুব বেশি দীর্ঘ নয়,অনেক বড় বেলাতেই আমি রবীন্দ্রনাথে ভেসেছি এবং শেষ পর্যন্ত ডুবেছি।কাজেই আমার সামনে বসে থাকা বিদগ্ধ শ্রোতৃমন্ডলী কে গান শোনানো আমার কাছে এক বিরাট প্রাপ্তি.... যাঁদের বাড়িতে মোহর দি,বাচ্চু দি র মত মানুষ গাইতেন।
..." চল্লিশ বছর পর ভালো রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলাম" বললেন বর্ষীয়ান ডাক্তার অমিতাভ গাঙ্গুলী।
"তুমি চালিয়ে যাও সারারাত ব্যাপী",
" ও জানেই না যে ও কি গায়",
"অপূর্ব গায়কি", "অপূর্ব কন্ঠস্বর",
"এতক্ষণ শুনলাম একটুও bore লাগেনি " ,
"আবার হলে আমাকে ডাকতে ভুলো না, জানতে পারি যেন"- বললেন একজন বয়োজ্যেষ্ঠ,যিনি শুধু খবর পেয়েছিলেন যে গান গাইবো, আমার অপরিচিত, খবর পেয়েই একটু সংকোচ করেই এসে গেছিলেন। "দিদি আপনার গানের মাঝে মাঝে একটু বলার ইচ্ছে থাকলো,এরপর গাইলে  আমাকে একটু গানের মাঝে মাঝে বলার সুযোগ দেবেন" ..রাজীব, বাচিক শিল্পী,অসাধারণ বলেন এবং দারুন কণ্ঠস্বর।উপস্থিত ছিলেন সংগীতচক্রের সম্পাদক সুখেন  ভট্টাচার্য  ও ডাক্তার পল্লব দাস, নির্মল দত্ত উপস্থিত ছিলেন।
রাগধ্বনি সদস্য দের মধ্যে বিশিষ্ট  তবলা বাদক নবীন দেবনাথ ও দুই স্কুলের শিক্ষকও  উপস্থিত ছিলেন।আমার কর্তা শ্রী অখিল রঞ্জন বসুর কথা ও না বলে পারছিনা এই ক্ষেত্রে। আমার দেখা একজন মানুষ যিনি সবার থেকে আলাদা সব দিক থেকে এবং আদর্শস্বরূপ। তবে তিনি সঙ্গীত জগতের নন ,বা এই সান্নিধ্য কখনও পাননি। যে কোনো কর্মকাণ্ডে তাঁর ব্যবস্থাপনা অতুলনীয়, তাই আজকের সন্ধ্যায় তারও ত্রুটি হয়নি। এবং সবচেয়ে বড় পাওয়া উনি পুরো সময়টা সামনে বসে গান শুনেছেন,শেষপর্যন্ত 2 টি গান ও অনুরোধ রেখেছিলেন। এবং ছিলেন আমার বাবা - মা, যাঁরা আজীবন আমার ছায়াসঙ্গী। আমার সঙ্গীত বা সংগীতজীবনের সবচেয়ে বড় অবদান আমার মায়ের, উনি আমার সবচেয়ে বড় সমালোচক। এবং এই সম্মন্ধে বলতে গেলে শেষ হবে না। মার কোলে শুয়ে মার গান শুনে বড় হয়েছি।আমি আবার কখনও গাইবো সেসব ছিল না, মার শাসনে  গান শেখা শুরু।বাড়িতে ছোটবেলা থেকেই কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কিছু শুনিনি,।একটা panasonic er টেপ রেকর্ডার এবং কয়েকটা ক্যাসেট।এছাড়াও অনেক গুণী শিল্পী এবং শ্রোতা উপস্থিত ছিলেন যাঁদের জন্যে অনুষ্ঠান অন্য মাত্রা পেয়েছে। এবং আমি সত্যিই আপ্লুত এহেন মানুষদের দর্শকাশনে পেয়ে।সবশেষে বলি হেমন্ত দার কথা, -"আজকের সন্ধ্যা সার্থক, আমার দরকার ছিল জানানো যে রবীন্দ্রনাথ এর গান কিভাবে গাইতে হয়,এবং আমার প্রস্তাব মেঘ (শ্যামশ্রী)মাসে দুটি করে ওয়ার্কশপ করুক , যার নাম হবে MUSIC WITH MEGH ART EDUCATION "এটি যেন ছিল শেষ পুরস্কার। সব মিলে এই সন্ধ্যাটি আমার জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকলো, জীবনে অনেক সংগ্রাম আছে,সঙ্গীত জীবনে অনেক যুদ্ধ আছে..সেদিন সব যেন সার্থক মনে হলো। সেসব গুলো না থাকলে আজকের এই পরম পাওয়া টা হতো না।  নিজেকে খুব ধনী মনে হচ্ছিল, যে রবীন্দ্রনাথ আমার নিভৃত সাধনা তা যেন আজ স্বীকৃতি পেলো। আমি কৃতজ্ঞ এবং আপ্লুত প্রতিটা মানুষের কাছে যাঁরা সেদিন উপস্থিত ছিলেন । আমি কৃতজ্ঞ শ্রী শান্তনু চ্যাটার্জী র কাছে যিনি অনেক দূর থেকে আমাকে সংগত করার জন্যে এসেছিলেন।যাঁদের নাম করেছি যাদের নাম করতে পারলাম না প্রত্যেককে আমার প্রণাম এবং নমস্কার জানাই। যাঁরা আমন্ত্রিত ছিলেন অথচ আসতে পারেননি তাদেরকে গান শোনাবার একটা সুযোগ আমিও মিস করেছি,কিন্তু তাদের জন্যে এবং আমার শ্রোতা বন্ধুরা যারা সবসময় আমার সঙ্গে রয়েছেন তাদের জন্যে একক অনুষ্ঠানের কিছু  গান আমি নিশ্চয় দিতে চেষ্টা করবো ধীরে ধীরে। আপনাদের মতামত কাম্য।
2 ماه پیش در تاریخ 1403/04/13 منتشر شده است.
504 بـار بازدید شده
... بیشتر